তার কারণ, যদি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়, SIR সঠিকভাবে কার্যকর হয় এই রাজ্যে, আর বিজেপি কর্মীরা যদি সঠিকভাবে ভোট গণনা কেন্দ্রে পাহারা দিয়ে নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে এই বিধানসভার ক্ষেত্রে বিজেপির অনেকটাই ভালো ফল হতে পারে এমনকি নাকাশীপাড়া বিধানসভা জয়ের কাছাকাছি চলে আসতে পারে।
গত বিধানসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার আগেই এই দুই বিধানসভায় ভোট গননা কেন্দ্রে বিজেপির অনেক কর্মী শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন না। নাকাশীপাড়া বিধানসভায় ৮২ বুথের গগনা কেন্দ্রে ও পলাশীপাড়া বিধানসভায় ৮৯ টি বুথের গননা কেন্দ্রে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিজেপি কর্মীদের দেখা যায়নি।
ভোটের ফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কর্মীদের উপস্থিতি ও প্রস্তুতি থাকতে হবে ভোট গণনা কেন্দ্রর মধ্যে। তবেই বিজেপি তৃণমূলকে সরাসরি টক্কর দিতে পারবে এই দুই বিধানসভায়।
নাকাশীপাড়া বিধানসভার বিগত বিধানসভা ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় - প্রায় ৮০টি উপর বুথে বিজেপি মাত্র ১০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে। এই কয়টি বুথেই বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত করেছে তৃণমূল। আর এই বুথগুলির গণনা কেন্দ্রে বিজেপি কর্মীদের শেষ পর্যন্ত দেখা যায়নি। কিন্তু বিজেপি যখন দেখল তাদের জয় হচ্ছে না পরাজয় নিশ্চিত, আস্তে আস্তে করে অনেক গণনা কেন্দ্র থেকে ধীরে ধীরে কর্মীরা বাইরে বেরিয়ে আসতে থাকে গত বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিনে।
সব থেকে বড় কথা গণনা কেন্দ্রে যে সমস্ত কর্মীদেরকে পাঠানো হয়েছিল তার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ সিপিএম থেকে আসা লোকজন যাদেরকে সবে বিজেপির দায়িত্ব দিয়েছিল। গণনা কেন্দ্রে পুরনো কর্মীদের পাঠানো উচিত যারা বিজেপি টাকে মন থেকে ভালোবাসে যারা দীর্ঘদিন ধরে বিজেপিটা করছে এমন কর্মীদেরকেই গণনা কেন্দ্রের মধ্যে পাঠানো উচিত। এটা বিজেপি করতে পারেনি। এটাও একটা বড় কারণ পরাজয়ের।
নাকাশিপাড়া বিধানসভা প্রায় ২ লক্ষের ৬০ হাজারের উপরে ভোটার। যার মধ্যে ৪৭% মুসলিম ভোটার। বাকি ৫৩% হিন্দু ভোটার। আরো আশ্চর্যের বিষয় এই হিন্দু ভোটারের ৭০% পার্সেন্ট তপশিলি উদ্বাস্তু মতুয়া ভোটার। যার বেশিরভাগটাই তৃণমূলের ঝুলি থেকে বিজেপির ঝুলিতে যায় এই ভোটের কারণেই তৃণমূল এতদিন জিতে আসছে এখানে। তবে মুসলিম ভোটারে এবার ভাঙ্গন ধরা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ঠিক এইরূপ পলাশীপাড়া বিধানসভায় ৯০ টি কাছাকাছি বুথে গণনা কেন্দ্রে শেষ পর্যন্ত বিজেপি
কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
গত লোকসভা ভোটের সময় এই বিধানসভার গননা কেন্দ্রের মধ্যে তৃতীয় রাউন্ড গণনার পরে ধীরে ধীরে কর্মীরা কমতে থাকে।
এই দুই বিধানসভায় বিজেপির একটা অংশে বিশ্বাসঘাতকতার কারণে কৃষ্ণনগর লোকসভা হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির।
তবে এই মুহূর্তে এই দুটো বিধানসভায় বিজেপির কার্যক্রম ভালো হওয়ায় মানুষের মনে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে হয়তো বিজেপি এইবার বিধানসভায় ভালো ফল করবে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে পলাশীপাড়া তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হলেও , তৃণমূলের দুর্নীতির কারনে,বিশেষ করে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি এই বিধানসভায় তৃণমূলকে ব্যাক ফুটে ঠেলে দিয়েছে।
এই অ্যাডভান্টেজ বিজেপি পেতে পারে এবার বিধানসভায় এখানে।
এখনো পর্যন্ত এই দুই বিধানসভায় বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা নাকাশিপাড়া ৪৬% ও পলাশীপাড়ায় ৪২% এর কাছাকাছি। তবে সঠিক প্রার্থী নির্বাচন ও নতুন পুরাতন সমস্ত কার্যকর তাকে ভোটের ময়দানে বিজেপি নামাতে পারলে, এবং রাজ্যে সঠিকভাবে SIR আর হলে জয়ের দোর গড়ায় পৌঁছে যাবে বিজেপি।
যদিও কৃষ্ণনগর লোকসভার মধ্যে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে এই দুটো বিধানসভা পরিচিত।
শাসক এবং বিরোধী দলকে এই দুই বিধানসভায় নিখুঁতভাবে প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে। শাসক দল তৃণমূল তারাও প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে এই দুই বিধানসভায় সমস্যায় পড়তে চলেছে।
নাকাশীপাড়া বিধানসভায় এবার তৃণমূল বিধায়ক কল্লোল খানকে পুনরায় টিকিট দেবে কিনা সেটাই কোটি টাকার প্রশ্ন। যদি বয়সজনিত কারণে তৃণমূল তাকে টিকিট না দেয়, সে ক্ষেত্রে কনিষ্ক চক্রবর্তীর নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। যদি সিপিএম কংগ্রেসের জোট হয় সেক্ষেত্রে একজন মহিলা প্রার্থীর নাম উঠে আসছে এখানে প্রার্থী হওয়ার জন্য।
বিজেপি প্রার্থী হওয়ার জন্য অনেকের নামই শোনা যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যে নামটি আছে তিনি হলেন পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা শিক্ষক অনুপ কুমার মন্ডল। তিনি এই মুহূর্তে নাকাশিপাড়া বিধানসভায় একদম হট সিটে বসে আছেন। এছাড়াও প্রার্থীর দৌড়ে রয়েছেন অনন্ত সরকার, দীনেশ বিশ্বাস, গতবারের প্রার্থী শান্তনুদেব সহ অনেকের নাম। তাই বিজেপি দলকে জনমত সমীক্ষা ও কর্মীদের মতামতের প্রাধান্য দিলেই বিজেপি এখানে জয়লাভ করতে পারে।
অপরদিকে পলাশীপাড়া বিধানসভায় তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হলেও মানিকবাবুর এসএসসি দুর্নীতি মানিক বাবুসহ তৃণমূলকে এই বিধানসভায় ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন তৃণমূল এখানে কাকে প্রার্থী করে। হয়তো মানিক বাবুর পুত্রের নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তিনিও দুর্নীতিতে নাম জড়িয়ে ফেলেছেন। এখানে তৃণমূল প্রার্থী ঠিক করতে হিমশিম খেয়ে যাবে। শোনা যাচ্ছে অভিষেক ঘনিষ্ঠ কোন যুবনেতার নাম এখানে প্রার্থীর দৌড়ে আছে।
বিজেপি প্রার্থীর দৌড়ে সবার প্রথমেই থাকছেন সঙ্গীতা ঘোষের নাম। তিনি জেলা রাজনীতি করেন। আগে তিনি মহিলা মোর্চা করতেন। তাকে বিজেপির বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে বিধানসভার জুড়ে।
তবে অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে ও তাকে দেখা যাচ্ছে প্রচুরভাবে। এছাড়াও বিজেপি প্রার্থীর দৌড়ে রয়েছেন গতবারের প্রার্থী বিভাস চন্দ্র মন্ডল।
তবে এই বিধানসভায় বিজেপি কর্মীদের মতামত এখান থেকে কোন মহিলাকে প্রার্থী করুক এবার দল।
এখন দেখা যাক বিজেপি দল কি করে।
যদিও ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে এখান থেকে তৃণমূল ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল এবং বিজেপি পেয়েছিল ২৯ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করা যাবে না।
সারা ভারতে এস আই আর(SIR )লাগু হয়েছে।
এই বিধানসভায় SIR এর মাধ্যমে প্রচুর ভোটার বাদ যেতে পারে। কমপক্ষে ১৫-২০ হাজার ভোটার তালিকা থেকে বাদ যা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া মানিক বাবুর দুর্নীতি সমগ্র পৃথিবীর লোক জেনে গেছে। সেই কারণে এই বিধানসভায় তৃণমূল বিজেপির পার্থক্য খুব বেশি নেই। যদি বিজেপি ঠিকঠাক প্রার্থী নির্বাচন করতে পারলে তাহলে জোরদার লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা আছে এখানে।
No comments:
Post a Comment